ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া: শেষ মুহূর্তের গোলেই নাটকীয় জয় ব্রাজিলের

ফুটবল মানেই যেন একেকটা নাটক। আর সেটা যদি হয় দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্ব, তাহলে তো কথাই নেই। ঠিক এমনই এক রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তে শেষ হাসি হেসেছে ব্রাজিল। “ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া” ম্যাচে যখন সবাই ধরে নিয়েছে—দুই দল হয়তো ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট হবে, তখনই গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে রাতের আঁধারে আলো হয়ে জ্বলে উঠলেন ভিনিসিউস জুনিয়র।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে (২১ মার্চ) বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে দরিভাল জুনিয়রের ব্রাজিল। ৯৯তম মিনিটে ভিনির এক অসাধারণ গোল ব্রাজিলকে এনে দিয়েছে স্বস্তির তিন পয়েন্ট, আর তুলে এনেছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

Juger Alo Google News যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

‍ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া: এক নজরে ম্যাচটির প্রেক্ষাপট

২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কনমেবল অঞ্চলের এই ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগের কয়েকটি ম্যাচে ব্রাজিল তাদের চেনা ছন্দে ছিল না। একের পর এক ড্র, হারের মধ্যে দিয়ে সমর্থকদের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছিল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে যেখানে জয়টাই স্বাভাবিক ছিল, সেখানে টানা বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল কোচ দরিভাল জুনিয়রের দিকেও।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

এই অবস্থায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল একপ্রকার ‘মাস্ট উইন গেম’। অন্যদিকে কলম্বিয়াও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া ছিল। ফলে ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ ছিল তুঙ্গে।

আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়

ম্যাচের নাটকীয় কাহিনি ধাপে ধাপে

প্রথমার্ধে দ্রুত লিড, আবার সমতা

ম্যাচের শুরুতেই গতি ছিল চমৎকার। ষষ্ঠ মিনিটেই ব্রাজিল পায় পেনাল্টির সুযোগ। রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ তারকা ভিনিসিউস জুনিয়রকে বক্সে ফাউল করেন কলম্বিয়ার ডানিয়েল মুনিয়োস। রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির নির্দেশ দেন। স্পটকিকে বল জালে জড়িয়ে দলকে এগিয়ে দেন বার্সেলোনার ফর্মে থাকা ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া।

তবে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ টিকলো না। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ব্রাজিল ডিফেন্ডারদের ভুলের সুযোগে কলম্বিয়ার লুইস দিয়াস অসাধারণ এক গোল করে স্কোরলাইন ১-১ করে ফেলেন। এই গোলে বড় ভুল ছিল জোয়েলিন্তনের। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে দেরি করেন শট নিতে, আর সেখান থেকেই বল পেয়ে চমৎকার ফিনিশিংয়ে গোল করেন দিয়াস।

প্রথমার্ধের বাকি সময়টায় আর কোনো দল উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বিরতিতে যায় দুই দল ১-১ সমতায়।

দ্বিতীয়ার্ধে হতাশা আর চোট

দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে ভিনিসিউস জুনিয়রের একটি শট রুখে দেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভার্গাস। এরপর রাফিনিয়া ও ভিনিসিউসের টানা দুটি প্রচেষ্টাও আটকে যায় গোললাইনের সামনে। ম্যাচ তখন উত্তেজনাপূর্ণ হলেও গোল আসছিল না।

৬৩তম মিনিটে হেমস রদ্রিগেসের ফ্রি-কিক থেকে দাভিনসন সানচেজের শট আলিসন বেকার ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন। তবে ফিস্ট করার সময় কলম্বিয়ার লের্মা ব্রাজিল গোলরক্ষককে ফাউল করেন, ফলে সম্ভাব্য গোল বাতিল হয়ে যায়।

৭১তম মিনিটে মাঠে ঘটে বড় একটি দুর্ঘটনা। মাথায় সংঘর্ষে পড়ে যান আলিসন ও সানচেজ। কিছুক্ষণ পর মাঠ ছাড়তে হয় দুজনকেই। আলিসনের পরিবর্তে মাঠে নামেন ব্রাজিলের নতুন গোলরক্ষক বেন্তো। এই পরিবর্তন ম্যাচে নতুন উত্তেজনা যোগ করে।

ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া

শেষ মুহূর্তে ভিনিসিউসের ম্যাজিক

যখন সবাই ভেবেছিল ম্যাচটা হয়তো ড্র-ই হতে যাচ্ছে, তখনই আসে সেই মুহূর্ত। রেফারির যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে অর্থাৎ ৯৮ মিনিটে ভিনিসিউস জুনিয়র দেখান তার ক্লাস।

বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দূরপাল্লার আড়াআড়ি শটের সামনে ছিলেন গোলরক্ষক ভার্গাস। কিন্তু মাঝপথে কলম্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে বলের দিক পাল্টে যায়, আর গোলরক্ষক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জড়িয়ে যায় জালে।

গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে তখন কেবল উল্লাস আর উন্মাদনা। ভিনিসিউসের গোলে নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের ২-১ জয়। পুরো স্টেডিয়ামে গর্জে ওঠে হাজারো দর্শক। মাঠে থাকা খেলোয়াড়রাও দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন তাদের ত্রাতাকে।

পয়েন্ট টেবিলে বড় অগ্রগতি ব্রাজিলের

এই জয় ব্রাজিলকে শুধু তিন পয়েন্টই দেয়নি, দিয়েছে পয়েন্ট তালিকায় বড় একটি উন্নতি। ১৩ ম্যাচ শেষে ২১ পয়েন্ট নিয়ে এখন দ্বিতীয় স্থানে তারা।

বর্তমান পয়েন্ট টেবিল (কনমেবল অঞ্চল)

  • আর্জেন্টিনা: ২৫ পয়েন্ট (১২ ম্যাচ)
  • ব্রাজিল: ২১ পয়েন্ট (১৩ ম্যাচ)
  • উরুগুয়ে: ২০ পয়েন্ট (১২ ম্যাচ)
  • প্যারাগুয়ে: ২০ পয়েন্ট (১৩ ম্যাচ)
  • কলম্বিয়া: ১৯ পয়েন্ট (১৩ ম্যাচ)

ব্রাজিল যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, তাহলে ২০২৬ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নেওয়া নিয়ে আর শঙ্কা থাকবে না।

সুপ্রসিদ্ধ সুপার ক্লাসিকোর আগে আত্মবিশ্বাসের টনিক

২৬ মার্চ বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ—ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। সুপার ক্লাসিকো নামেই যার পরিচিতি। এই ম্যাচের আগে কলম্বিয়ার বিপক্ষে এই জয় নিঃসন্দেহে বড় আত্মবিশ্বাস যোগাবে সেলেকাওদের।

যেখানে আগের ম্যাচগুলোতে টানা হার ও ড্রয়ে ভুগছিল ব্রাজিল, সেখানে এমন নাটকীয় জয় দলের মনোবল অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

সমর্থকদের বার্তা: পাশে থাকুন, সাহস দিন

ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন থেকে একটি ভিডিও বার্তায় খেলোয়াড়রা সরাসরি দর্শকদের মাঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বলেন—
“হ্যালো ব্রাসিলিয়ার মানুষ, আমি অ্যালিসন। আমরা কলম্বিয়ার বিপক্ষে লড়াই করছি, আপনাদের সমর্থন চাই গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে। আসুন, একসঙ্গে জয় উদযাপন করি।”

জোয়েলিন্তন বলেন—
“আপনাদের সমর্থন ছাড়া আমরা কিছুই না। আসুন, আমরা একসাথে জিতি।”

আর ম্যাথিউস কুনহা তো প্রায় অনুরোধ করেই বলেন—
“গারিঞ্চা স্টেডিয়াম যেন দর্শকে ভরে ওঠে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের গর্ব ফিরিয়ে দেবো।”

শেষ কথা: ভিনির গোল শুধু একটি গোল নয়, এক ইতিহাস

ভিনিসিউস জুনিয়রের শেষ মুহূর্তের সেই গোল শুধু একটি ম্যাচ বাঁচায়নি, একসময় ঘুরে দাঁড়ানো ব্রাজিলের গল্পকেও জাগিয়ে তুলেছে। সমর্থকদের মুখে হাসি ফিরেছে, কোচের চাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে, আর সবচেয়ে বড় কথা—সুপার ক্লাসিকোর আগে পুরো দলের মধ্যে ফিরেছে জয়ের আত্মবিশ্বাস।

ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া” ম্যাচটি নিছকই এক ফুটবল ম্যাচ ছিল না, ছিল আবেগ, প্রত্যাবর্তন আর বিশ্বাসের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়। সেই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আজ একটি নাম—ভিনিসিউস জুনিয়র

Leave a Comment