২০১৫ সালের দিকে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। মোবাইল ফোনের সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি এর আকৃতিতেও পরিবর্তন আসতে থাকে। সেই সময়েই ইন্টারনেটের হালাল ও হারাম বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েন তরুণ উদ্যোক্তা নিজাম উদ্দিন, যিনি পরবর্তীতে কাহফ প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই চিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরেক তরুণ উদ্যোক্তা ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ ওমর আল জাবির তার সঙ্গে যুক্ত হন।
তাদের লক্ষ্য ছিল একটি নিরাপদ ও অশ্লীলতামুক্ত ইন্টারনেট জগৎ তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০২২ সালে কাহফ বিভিন্ন অ্যাপ বাজারে আনে, যা বর্তমানে গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে চারটি অ্যাপ রয়েছে, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং অশ্লীলতামুক্ত সাইবার জগত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ইউটিউব নতুন আপডেট: প্লেব্যাক স্পিড নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন সুবিধা
সম্প্রতি, ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, কাহফের দুই কর্ণধার নিজাম উদ্দিন এবং ওমর আল জাবিরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাদের উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। কাহফের সিটিও ও কো-ফাউন্ডার ওমর আল জাবির তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে মানুষ এখনও ইন্টারনেটের অন্ধকার দিক সম্পর্কে সচেতন নয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি গত চার বছর ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটাতে কাজ করেছেন এবং সেখানে তার কাজ ছিল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঘটে যাওয়া অপরাধ দমন করা।
বিশেষ করে মেসেঞ্জার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপে শিশু-কিশোরদের ওপর ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো মোকাবিলা করা ছিল তার প্রধান দায়িত্ব। তিনি জানান যে, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ১০ জন শিশু-কিশোরের মধ্যে ৬ জনই ক্ষতির শিকার হন এবং তারা এমন কন্টেন্ট দেখেন যা তাদের মানসিকতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়েই শিশুদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দিচ্ছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই কাহফ এমন কিছু অ্যাপ এবং ডিভাইস তৈরি করতে চায় যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন: মোবাইলে কথা বলতে বলতে খাবার খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
কাহফের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নিজাম উদ্দিন জানান, ২০১৫ সালে জাপান সফরের সময় তার মাথায় হালাল-হারামের বিষয়টি আসে এবং তখন থেকেই তিনি ভাবতে শুরু করেন কিভাবে অনলাইন জগতকে শরিয়াহ কম্প্লাইন করা যায়। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং বিশ্বজুড়ে ৯৩০ মিলিয়নের বেশি মুসলিম ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আমরা চাই অনলাইনের সমস্ত হারাম কন্টেন্ট বন্ধ করতে এবং হালাল বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যাতে একটি বৃহৎ হালাল ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইতোমধ্যে কাহফ দুটি অ্যাপ চালু করেছে— কাহফ গার্ড এবং মাহফিল। কাহফ গার্ড ব্যবহারকারীদের অনলাইনের বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষয় থেকে রক্ষা করবে যেমন পর্নোগ্রাফি সাইট, জুয়া সাইট, ম্যালওয়্যার এবং ফিশিং সাইটগুলো। অন্যদিকে মাহফিল অ্যাপটি ইউটিউবের একটি হালাল বিকল্প হিসেবে কাজ করবে যেখানে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনাও শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এছাড়াও কাহফ শিগগিরই একটি হালাল ব্রাউজার বাজারে আনতে যাচ্ছে যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও নিবন্ধন করার সহজ উপায়
কাহফের আসন্ন প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে রয়েছে কাহফ কিডস, কাহফ ব্রাউজার, কাহফ ইন্টারনেট এবং কাহফ সিম। কাহফ কিডস এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটি শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও শিশু-বান্ধব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে কাহফ ব্রাউজার হালাল ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টারিং ব্যবস্থা রাখবে যাতে কোনো হারাম বা ক্ষতিকর কন্টেন্ট ব্যবহারকারীদের সামনে না আসে। এছাড়া কাহফ সিম এবং ইন্টারনেট পরিষেবাগুলো মুসলিমদের জন্য হালাল ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করবে।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে কাহফ একটি অশ্লীলতামুক্ত এবং নিরাপদ ইন্টারনেট পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
1 thought on “ইন্টারনেট দুনিয়ার অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখবে কাহফ”