জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নির্দেশনা দিয়েছে। ভ্যাট দাখিল প্রক্রিয়া সহজতর করতে এনবিআর অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে, যা ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সমাধান প্রদান করে। এনবিআর বলছে, কাগুজে ভ্যাট দাখিলের তুলনায় অনলাইন ভ্যাট সিস্টেমে রিটার্ন দাখিল করলে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রসেসিং সহজ হয়, যা করদাতাদের ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
এ প্রক্রিয়াটি সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হওয়ায় এনবিআর সকল করদাতাকে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে উৎসাহিত করছে। আমাদের এ নিবন্ধে থাকবে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া, ভ্যাট নিবন্ধন এবং কীভাবে আপনি ঘরে বসে তা সম্পন্ন করতে পারেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
আরও পড়ুন: গুগলে ভুল করেও সার্চ করবেন না যে ছ’টি শব্দ
অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সুবিধা
অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
- সহজ এবং দ্রুত: ঘরে বসেই অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করা যায়। এতে করদাতাদের ভ্যাট দপ্তরে যেতে হয় না।
- ২৪/৭ সার্ভিস: যেকোনো সময়, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাতদিন, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা যায়।
- নির্ভুল তথ্য ও সংরক্ষণ: অনলাইন পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করলে সব তথ্য সিস্টেমে সঠিকভাবে সংরক্ষিত থাকে, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
- সহায়তা পেতে সহজ: ভ্যাট কমিশনারেট, বিভাগীয় দপ্তর এবং সার্কেল অফিসে করদাতাদের জন্য অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া
ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের জন্য এনবিআরের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। নিচে অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বিস্তারিত ধাপগুলো দেওয়া হলো:
ধাপ ১: এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটে গেলে ‘অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল’ সেকশন পাবেন।
ধাপ ২: ভ্যাট অনলাইন পোর্টালে প্রবেশ
‘অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল’ লিঙ্কে ক্লিক করার পর, আপনি ভ্যাট অনলাইন পোর্টালে পৌঁছে যাবেন। এখানে আপনাকে একটি ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে।
ধাপ ৩: ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি
সঠিক তথ্য দিয়ে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনি ভবিষ্যতে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমে লগইন করতে পারবেন।
ধাপ ৪: ভ্যাট ২.১ ফরম পূরণ
লগইন করার পর, আপনাকে ‘নিবন্ধন’ অপশন নির্বাচন করতে হবে এবং ভ্যাট ২.১ ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরমে আপনার ব্যবসার যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে।
ধাপ ৫: রিটার্ন জমা দিন
ফরম পূরণের পর তা জমা দিন। সিস্টেম থেকে সফল রিটার্ন দাখিলের একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। এই সার্টিফিকেট আপনি সরাসরি সিস্টেম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনার ইমেইলে একটি কপি পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: গুগল স্টোরেজ ফুল? সহজে সমাধান পাবেন!
ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তি প্রতি কর মেয়াদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা:
- প্রতিমাসের ১৫ তারিখ: প্রতি কর মেয়াদের জন্য, কর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
- সরকারি ছুটি হলে: যদি ১৫ তারিখ কোনো সরকারি ছুটি থাকে, তবে তার আগের কর্মদিবসে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
- অনলাইন সুবিধা: অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন যে কোনো সময়, দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় জমা দেওয়া যাবে।
অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়া
ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়াও এখন সহজ এবং অনলাইনে করা সম্ভব। যে কোনো আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং করযোগ্য সরবরাহকারীকে ভ্যাটের আওতায় আসতে হলে বিআইএন (ব্যবসায়িক পরিচিতি নম্বর) গ্রহণ করতে হয়। অনলাইনে নিবন্ধন করতে আপনাকে কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনের ধাপগুলো:
- এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ: প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘অনলাইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন’ অপশনটি নির্বাচন করুন।
- ইউজার আইডি তৈরি করুন: ভ্যাট অনলাইন পোর্টালে গিয়ে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
- লগইন করে ফরম পূরণ করুন: পোর্টালে লগইন করে ‘নিবন্ধন’ অপশনে গিয়ে ভ্যাট ২.১ ফরমটি পূরণ করুন।
- ফরম জমা দিন: ফরম সঠিকভাবে পূরণ করার পর তা জমা দিন। সিস্টেম থেকে একটি নিবন্ধন সনদ বা টার্নওভার ট্যাক্স এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে, যা আপনি ইমেইল বা ডাউনলোডের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন।
ফেসবুক কীভাবে আপনাকে অসুখী মানুষে পরিণত করছে, আপনি জানেন?
সশরীরে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও নিবন্ধন
যারা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে চান না, তারা সুবিধাজনক কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বা এনবিআরের নির্ধারিত সেবা কেন্দ্রে সশরীরে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। একইভাবে অনলাইনের বাইরে ভ্যাট নিবন্ধনও সশরীরে করা যায়। তবে এনবিআর অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের ওপর জোর দিয়ে থাকায়, এটি সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং ঝামেলামুক্ত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
রিটার্ন দাখিল না করলে কী হবে?
যদি কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি সময়মতো রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন, তবে কমিশনারের কাছে বিলম্বে রিটার্ন দাখিলের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এ বিলম্ব এক মাসের বেশি হবে না। এছাড়া, রিটার্ন সংশোধনের জন্যও আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
উপসংহার
ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখন খুবই সহজ এবং অনলাইনে করা যায়। এনবিআর করদাতাদের অনলাইন পদ্ধতিতে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে উৎসাহিত করছে, যা সময় সাশ্রয়ী ও ঝামেলামুক্ত। অনলাইনে নিবন্ধন এবং রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করদাতারা আধুনিক ও স্বচ্ছ ভ্যাট ব্যবস্থার অংশ হতে পারেন। এনবিআরের ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনিও সহজেই অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও নিবন্ধন করতে পারেন।