রংপুর কি এ দেশের অঞ্চল নয় নাকি বাংলা মায়ের সতিন?

রংপুরের উন্নয়ন

রংপুর বিভাগ, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অবহেলিত হয়ে আসছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভার সিদ্ধান্তগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রংপুর অঞ্চলের জন্য তেমন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার ১ শতাংশের কম রংপুর বিভাগে বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মেগা প্রকল্প বাদ দিয়ে রংপুরের বরাদ্দ ছিল মাত্র দশমিক ৯৮ শতাংশ।

রংপুরে কোনো মেগা প্রকল্প না থাকায়, ওই খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। করোনাকালে সরকার গরিবপ্রতি যে বরাদ্দ দিয়েছিল, সেখানেও সবচেয়ে কম বরাদ্দ ছিল রংপুরে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রেও রংপুর বিভাগ সবচেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে। রংপুর একমাত্র বিভাগ যেখানে অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হয়নি এবং অবকাঠামো নির্মাণেরও কোনো খবর নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিভাগের অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোনো বরাদ্দের ঘোষণা নেই।

আরও পড়ুন : বাজেটে বৈষম্যের শিকার রংপুর, রসিকে উন্নয়ন বরাদ্দ শূন্য!

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরও কোনো উন্নয়ন নেই। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে ১৫টি একাডেমিক ভবন, একটি ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, ৮টি হল, ১৪টি কোয়ার্টার, ৬টি ডরমিটরি, ১টি জিমনেসিয়াম, ১টি অডিটরিয়াম হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে চার ভাগের এক ভাগও হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা গণমাধ্যমে খবর সূত্রে জানা গেছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে এখানে একবারও এমন কোনো বড় প্রকল্প দেওয়া হয়নি, যাতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। গত অর্থবছরে নতুন প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের চেয়ে আয়তন বিবেচনায় প্রায় ১২০ গুণ কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল রংপুরে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে রংপুর সিটি করপোরেশনে বরাদ্দের ঘরে ‘শূন্য’ (০) লেখা। পুরোনো অর্থবছরের বাজেটে যে সামান্য বরাদ্দ পেয়েছিল, তা পাওয়া না-পাওয়ায় তেমন পার্থক্য নেই।

আরও পড়ুন : 2024 সালে ফ্রি টাকা ইনকাম করার সেরা Apps এবং সাইট

রংপুরের জন্য না আয়তনভিত্তিক, না জনসংখ্যাভিত্তিক, না প্রয়োজনভিত্তিক বাজেট দেওয়া হয়। দীর্ঘ বঞ্চনার কারণে রংপুরের মানুষ কথা বলতে শুরু করেছেন। জনগণ সংগঠিত হলে বৈষম্যের চেয়ে ভয়াবহ অন্যায়ও দূর হয়। বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আমরা সুষম উন্নয়ন চাই। ছোট্ট একটি দেশের ভেতরে অঞ্চলগত স্বার্থ দেখার দোষমুক্ত হতে না পারলে তাঁদের দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে না।

রংপুর অঞ্চলে অনেক কিছুর ঘোষণা দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু সেসব বাস্তবায়ন করে না। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হয়েছে অনেক বছর আগে। ২৩ বছর আগে রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস করেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে সেটি আর হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার তারপর ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে, কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। রংপুরে একটি চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হবে বলে শুনছি। সেটি হতে আরও অর্ধশত বছর লাগবে কি না, জানা নেই।

আরও পড়ুন : একসঙ্গে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হলো রংপুর দম্পতির: প্রেম ও বন্ধুত্বের অনন্য উদাহরণ

এই অবস্থা দেখে প্রশ্ন জাগে, রংপুর কি এ দেশের অঞ্চল নয় নাকি বাংলা মায়ের সতিন? রংপুরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এবং বঞ্চিত। তাদের উন্নয়নের জন্য সুষম বরাদ্দ এবং প্রকল্প গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত এবং রংপুরের উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।