প্রিয়নাথের নামটি বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে পিএসসি (বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন) প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার প্রতিযোগীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত পিএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রিয়নাথের নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ৪৫০ জন পরীক্ষার্থীকে কতো রেটে প্রশ্ন বিতরণ করেছিলেন তিনি?
প্রিয়নাথের এই কেলেঙ্কারির খবর প্রথম প্রকাশিত হয় গত মাসে, যখন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে যে, প্রিয়নাথ এবং তার সহযোগীরা পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নপত্র বিতরণ করতেন। প্রায় ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ফেঁসে যাচ্ছে হাই প্রোফাইল বিসিএস ক্যাডাররা: প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারির নতুন মোড়
প্রিয়নাথ রায়ের পেছনের গল্প
প্রিয়নাথ রায় ঠাকুরগাঁও জেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায়ই বাবাকে হারিয়ে তিনি কঠিন পরিস্থিতিতে বড় হয়েছেন। এইচএসসি পাস করার পরে বন বিভাগে চাকরি নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর অডিটর পদে যোগ দেন। কিন্তু তার জীবন পাল্টে যায় যখন তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁস এর কৌশল
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রিয়নাথ একটি সুপরিকল্পিত চক্রের মাধ্যমে এই প্রশ্ন বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। প্রিয়নাথ রায় এবং তার সহযোগীরা পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। একটি প্রশ্নপত্রের জন্য চুক্তি হতো ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং অগ্রিম নেওয়া হতো ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। এই বিশাল অর্থের ভাগবাটোয়ারাও হতো। প্রিয়নাথ রায় প্রায় ৪৫০ জনকে প্রশ্নপত্র দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। তার সম্পত্তি এখন দিনাজপুর ও ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি সহ অনেক জায়গায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: রংপুর কি এ দেশের অঞ্চল নয় নাকি বাংলা মায়ের সতিন?
প্রিয়নাথের সহযোগীরা
এই চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকার নোমান সিদ্দিক এবং আরও অনেকে। সাখাওয়াত তার পানির ফিল্টারের ব্যবসার আড়ালে এই কর্মকাণ্ড চালাতেন। অপরদিকে, নোমান সিদ্দিক ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক হয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় প্রিয়নাথ রায় এই চক্রটি সফলভাবে চালিয়ে গেছেন।
এর প্রভাব কী?
প্রশ্নফাঁসের এই কেলেঙ্কারি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বিরাট প্রভাব ফেলেছে। একদিকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্ষতির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে পিএসসি পরীক্ষার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেছে। সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর অনেক পরীক্ষার্থীর জন্য এটি একটি বিরাট ধাক্কা।
আরও পড়ুন: এক্স মানে কি গুগল? না জানলে জেনে নিন এর বিভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার
আইনি পদক্ষেপ
পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রিয়নাথ রায় সহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনার পেছনে থাকা মূল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রিয়নাথের নামে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
প্রিয়নাথ রায়ের এই পিএসসি প্রশ্নপত্র কেলেঙ্কারি বাংলাদেশের চাকরির জগতে একটি বড় কলঙ্ক। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষার ক্ষেত্রে সততা এবং নৈতিকতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
1 thought on “প্রিয়নাথের পিএসসি প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারি: ৪৫০ জনকে কত রেটে দিয়েছিলেন?”