২১ বছর পর ঢাবির হলে মাইকে আযান: আবেগে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা

আযান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে দীর্ঘ ২১ বছর পর মাইকে আযান দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগের জোয়ার বইছে। আযানের ধ্বনি শোনা মাত্রই ক্যাম্পাসের মুসলিম শিক্ষার্থীরা মসজিদমুখী হয়ে পড়ে এবং ঢাবির বিভিন্ন হলে এক আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন: ১২ বছর বয়সে ৬ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন মুনতাছির

আযান বন্ধ ছিল দুই দশকেরও বেশি সময়

দীর্ঘ ২০ বছর পরে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের মসজিদ থেকে মাইকে সুউচ্চ কণ্ঠে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। এ সময় অনেকে সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পোস্টের ক্যাপশনে অনেকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতারা তাদের ঘুমের সমস্যা হতো বলে ১৫ বছর আগে মাইকে আজান দেওয়া বন্ধ করে দেন। তবে দাবিটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন হলের সিনিয়র ইমাম ও খতিব মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নাঈম।

তিনি আরও জানান:”২০০২ সালের দিকে একজন হাউজ টিউটরের উদ্যোগে মাইক লাগানো হয়েছিল। কিছুদিন সেটা চলমান ছিল। তবে মুয়াজ্জিন না থাকায় একার পক্ষে সবকিছু পরিচালনা করাও কঠিন ছিল।”তিনি আরও বলেন, “কিছুদিন পর মাইক নষ্ট হলে সেটা ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর থেকে ছোট সাউন্ড বক্সেই আযান দেওয়া হয়।”

আরও পড়ুন: দিনাজপুরে আমির হামজার কুরআন মাহফিলে ১০ সনাতনী হিন্দুর ইসলাম গ্রহণ!

কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্যান্য কাজের সাথে মাইকের ব্যবস্থা করে হল প্রশাসন। 

ছাত্রলীগের বাধায় মাইকে আজান বন্ধ হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটা সত্য নয়। ছাত্রলীগের নেতারা আজান দেওয়া নিয়ে আমাদের ওপর কখনো হস্তক্ষেপ করেনি। এটা মানুষ না জেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। 

আবেগের প্রকাশ

ঢাবির আবাসিক ছাত্ররা জানান, মাইকে আযান দেওয়ার মাধ্যমে তারা তাদের হল জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ফিরে পেয়েছেন। আযানের সুর শুনে মনের ভেতর এক অনন্য প্রশান্তি অনুভব করছেন বলে জানান অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আযানের ধ্বনি শোনা মাত্রই আমাদের হৃদয়ে এক আলাদা অনুভূতি জাগ্রত হয়। আমরা মাইকে আযানের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। আজ আমাদের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এই আযান পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তারা বলেছে, ধর্মীয় প্রয়োজন ও শিক্ষার্থীদের আবেগের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত। মাইকে আযান দেওয়ার মাধ্যমে সেই সুযোগ পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: টয়লেটযুক্ত গোসলখানায় অযু করার সময় দোয়া পড়া যাবে কি?

অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্ররাও এই ঘটনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে কিছু শিক্ষার্থী আযানের মাইক ব্যবহারে ক্যাম্পাসে এক ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে পড়াশোনায় বিঘ্ন না ঘটে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাইকের শব্দের মাত্রা ও সময় সূচি নির্ধারণ করে দিলে আযান শোনা যাবে, আবার পড়াশোনার পরিবেশও বজায় থাকবে।

এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং মুসলিম শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আযানের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন