ঈদুল ফিতর—মুসলিম Ummah-র জন্য সবচেয়ে আনন্দময় একটি দিন। রোজার একমাস আত্মসংযম, ইবাদত ও ত্যাগের পর এই দিনটি আসে মিলন, উৎসব এবং খুশির বার্তা নিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানের শেষ প্রহরে প্রশ্ন জাগে—“কবে হবে ঈদ?” সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় চাঁদের অপেক্ষা, আকাশে চোখ রেখে নতুন মাসের আগমন বার্তা শোনার চেষ্টা। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
২০২৫ সালের ২৯ রমজান, অর্থাৎ ২৯ মার্চ—এই দিনে ঈদের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন চাঁদের এমন অবস্থান থাকবে যে খালি চোখে তো নয়ই, টেলিস্কোপ দিয়েও চাঁদ দেখা যাবে না। ফলে রমজান পূর্ণ ৩০ দিন হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল, এবং ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে ৩১ মার্চ।
তাহলে এবার ঠিক কবে হবে ঈদুল ফিতর? চাঁদ না দেখা গেলে কী হবে? চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ঈদের চাঁদ নিয়ে কেন এই আলোচনা?
ঈদুল ফিতর ইসলামী ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের প্রথম দিন পালিত হয়। ইসলামী ক্যালেন্ডার চাঁদনির্ভর হওয়ায়, প্রতিটি নতুন মাসের শুরু হয় চাঁদ দেখার মাধ্যমে। তাই ঈদের তারিখ নির্ধারণ হয় শাওয়ালের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে।
বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে আরব ও ইসলামিক বিশ্ব, শুধু চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করেই ঈদ উদযাপনের দিন নির্ধারণ করে। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী যদি ২৯ রমজানে চাঁদ না দেখা যায়, তবে স্বাভাবিকভাবেই রমজান হবে ৩০ দিনের এবং ঈদ হবে পরদিন অর্থাৎ ৩১ মার্চ ২০২৫।
আরও পড়ুন
জ্যোতির্বিজ্ঞানের চোখে চাঁদের অবস্থান
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র তাদের প্রতিবেদনে বলেছে—২৯ মার্চ (২৯ রমজান) সন্ধ্যায় আরব ও ইসলামি বিশ্বের কোনো অংশ থেকেই চাঁদ দেখা সম্ভব হবে না। এমনকি শুধুমাত্র টেলিস্কোপ দিয়েও নয়।
কারণ কী? কারণটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পুরোপুরি ব্যাখ্যাযোগ্য।
- চাঁদ সূর্যাস্তের আগে অস্ত যাবে, অর্থাৎ সূর্য ডোবার আগেই আকাশ থেকে চাঁদ মিলিয়ে যাবে।
- সূর্য ও চাঁদের সংযোগ (conjunction) ঘটবে সূর্যাস্তের পর, যার মানে হচ্ছে নতুন চাঁদের জন্ম তখনও হয়নি যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে।
এই দুই কারণের ফলে খালি চোখে, টেলিস্কোপে কিংবা আধুনিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ইমেজিং প্রযুক্তির মাধ্যমেও চাঁদ দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন: রংপুরে সস্তার মার্কেট: কম দামে ব্র্যান্ডের পোশাক কেনার সেরা ঠিকানা
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাঁদের অবস্থান
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে কিছু মুসলিম দেশ ও শহরে চাঁদের অবস্থান কেমন থাকবে।
চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক—
ইন্দোনেশিয়া, জাকার্তা
- চাঁদ অস্ত যাবে: সূর্যাস্তের ৬ মিনিট আগে
- চাঁদ দেখা সম্ভব? একেবারেই অসম্ভব
ওমান, মাসকাট
- চাঁদ অস্ত যাবে: সূর্যাস্তের ৫ মিনিট পর
- চাঁদের বয়স: ১ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট
- সূর্য থেকে দূরত্ব: ১.৫ ডিগ্রি
- পর্যবেক্ষণ: অসম্ভব
সৌদি আরব, মক্কা
- চাঁদ অস্ত যাবে: সূর্যাস্তের ৮ মিনিট পর
- চাঁদের বয়স: ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট
- সূর্য থেকে দূরত্ব: ২.২ ডিগ্রি
জর্ডান, আম্মান ও ফিলিস্তিন, জেরুজালেম
- চাঁদ অস্ত যাবে: সূর্যাস্তের ১১ মিনিট পর
- চাঁদের বয়স: ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট
- সূর্য থেকে দূরত্ব: ২.৩ ডিগ্রি
এই সব অঞ্চলে চাঁদ “ড্যানজন” সীমার নিচে থাকবে। ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী দানজনের মতে, যদি সূর্য থেকে চাঁদের দূরত্ব সাত ডিগ্রির কম হয়, তাহলে তা খালি চোখে বা টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা অসম্ভব।
শুধু আমেরিকা মহাদেশে সামান্য সম্ভাবনা
তবে আমেরিকা মহাদেশের কিছু অংশে, বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে, টেলিস্কোপ ব্যবহার করে চাঁদ দেখা যেতে পারে। তবে আমেরিকার পূর্ব অংশ, এমনকি পশ্চিম উপকূলেও খালি চোখে চাঁদ দেখা যাবে না। তাই আমেরিকার মুসলিমরাও চাঁদ দেখার জন্য নির্ভর করবেন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উপর।
এবারের রমজান হবে ৩০ দিনের
যেসব দেশ শুধুমাত্র চাঁদ দেখে রমজান ও ঈদের তারিখ নির্ধারণ করে, সেসব দেশের জন্য এবারের রমজান মাসটি হতে যাচ্ছে পূর্ণ ৩০ দিনের। কারণ ২৯ রমজানে চাঁদ দেখা না গেলে, ইসলামী বিধান অনুযায়ী রমজান ৩০ দিন পূর্ণ করা হয়।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্রের বিশ্লেষণ বলছে—মধ্যপ্রাচ্যসহ অধিকাংশ ইসলামি দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ৩১ মার্চ ২০২৫, রোববার।
তাহলে বাংলাদেশে কবে ঈদ হবে?
বাংলাদেশে সাধারণত চাঁদ দেখার উপরই নির্ভর করা হয় ঈদের দিন ঘোষণায়। যদিও মাঝেমধ্যে সৌদি আরবের ঘোষণা অনুসরণ করে অনেকেই অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।
যেহেতু ২৯ রমজানে চাঁদ দেখা অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে, তাই বাংলাদেশের জন্যও রমজান ৩০ দিনের হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশে ৩১ মার্চ, সোমবারে ঈদুল ফিতর উদযাপনের সম্ভাবনাই প্রবল।
জ্যোতির্বিদদের বক্তব্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বছরের পর বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কেউ দেখে বলছে ‘চাঁদ উঠেছে’, আবার কেউ বলছে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ এনে দেয় একটি বিশ্বাসযোগ্য ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
চাঁদের জন্ম, সূর্যাস্তের সময়, চাঁদের উচ্চতা, সূর্য থেকে দূরত্ব—এসব হিসেব করে আগেভাগেই বলা সম্ভব হয় কোনদিন চাঁদ দেখা যাবে, আর কোনদিন নয়।
চাঁদ না দেখা গেলেও আনন্দে ভাটা নেই
চাঁদ না উঠলেও মুসলমানদের মধ্যে ঈদের আনন্দে ভাটা পড়ে না। বরং একদিন বাড়তি রমজান মানে আরও একদিন ইবাদতের সুযোগ, আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ এবং আল্লাহর রহমত হাসিলের সময়।
রমজান যেমন ধৈর্য, সংযম, প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির মাস, ঈদ তেমনই আনন্দ, মিলন ও খুশির উৎসব। ঈদ সামনে এলেই যেমন মানুষের মধ্যে চলে আসে খুশির হাওয়া, তেমনই চাঁদ নিয়ে এই উত্তেজনা, এই অপেক্ষাও হয়ে ওঠে ঈদের আনন্দেরই একটি অংশ।


ঈদুল ফিতর ২০২৫ কত তারিখে
২০২৫ সালের ঈদুল ফিতর ৩১ মার্চ, সোমবার অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, এটি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করবে, তাই চাঁদ দেখা অনুযায়ী তারিখ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
শেষ কথা: আকাশে না থাকলেও ঈদের চাঁদ হৃদয়ে জ্বলুক
চাঁদ দেখা হোক ২৯ রমজানে বা ৩০ রমজানে—ঈদের বার্তা আসবেই। জ্যোতির্বিদরা আমাদের আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রস্তুতি নিতে। ঈদের দিন একদিন পিছিয়ে গেলে উৎসবের পরিমাণ কমে না, বরং বাড়ে প্রস্তুতির সময়, বাড়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ।
তাই ২৯ রমজানে চাঁদ দেখা না গেলেও, আমাদের হৃদয়ে ঈদের চাঁদ আগেই জ্বলে উঠুক আলোর মিছিল হয়ে।
3 thoughts on “২৯ রমজানে দেখা যাবে না ঈদের চাঁদ: তাহলে কবে হচ্ছে ঈদুল ফিতর ২০২৫”