ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই দিনই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে অনেকেই দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর, সাবেক সরকারের অনেক এমপি ও মন্ত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা বৃহত্তর শেখ পরিবারের সদস্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
আরো পড়ুন: অবশেষে প্রকাশ্যে এলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
শেখ হাসিনার স্বজনেরা সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ছিলেন এবং প্রায় ১৫ জন এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে তিনজন, সহযোগী সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সদস্য-সচিব হিসেবে তিনজন দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তিনি ৫ আগস্টের পরে একাধিকবার ফেসবুকে লাইভে এসে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন, বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে আছেন। তিনি দুই মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ৫ আগস্টে ভারতে চলে যান। তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পরিচালনা করেন। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা জানান, শেখ হেলালকে কেন্দ্র করে পাওয়ার হাউস গড়ে উঠেছিল, এবং তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তারিক আহমেদ আত্মগোপনে আছেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের পাঁচ ছেলে খুলনা বিভাগের অঘোষিত অভিভাবক ছিলেন। তাদের মধ্যে শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল গত সংসদেও এমপি ছিলেন। শেখ হেলাল ও তার ছেলে শেখ তন্ময় ভারতে আছেন, তবে জুয়েল ৫ আগস্টের পরে দেশে ছিলেন। তাদের তিন ভাই শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলালের অবস্থান জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের কাছে কী চায় ভারত, জানালেন জয়শঙ্কর
শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তার দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও নাইম। ফাহিম ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। শেখ ফজলুল হক মণির দুই সন্তান, শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস, ৫ আগস্টের পর থেকে খোঁজ নেই।
শেখ সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ক্যাসিনো বিতর্কের সময় আলোচনায় এসেছিলেন এবং বর্তমানে সিঙ্গাপুরে আছেন বলে জানা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের এমপি ছিলেন। তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। ৫ আগস্টের পরে হাসানাত আবদুল্লাহ ও তার ছোট ছেলে ভারতে চলে যান। তবে সাদিক আবদুল্লাহর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শেখ পরিবারের আরেক সদস্য, বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ কবির হোসেন, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও বাংলাদেশ বিমা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তার ভাই শেখ নাদির হোসেন মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাদের অবস্থানও অজানা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বঙ্গবন্ধুর চাচাতো বোন ফিরোজা বেগমের স্বামী। ৫ আগস্টের পর তিনি ভারত গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে, তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
এই পরিস্থিতি শেখ পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে তাদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলছেই।
3 thoughts on “শেখ পরিবারের সদস্যরা এখন কে কোথায়? যা জানা গেলো”