ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা: ব্রাজিলকে ৬ গোলে উড়িয়ে দিলো আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা: ভ্যালেন্সিয়া, ভেনেজুয়েলা (এপি) — ম্যানচেস্টার সিটি’র নতুন সাইনিং ক্লদিও একেভেরি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-২০ দলকে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ বি-এর প্রথম ম্যাচে ৬-০ ব্যবধানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় এনে দিয়েছেন।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ম্যাচের শুরুতেই তিনটি গোল করে চমক সৃষ্টি করে। খেলার মাত্র ৬ মিনিটে ইয়ান সুবিয়াব্রে প্রথম গোলটি করেন। এরপর ৮ মিনিটে ক্লদিও একেভেরি গোল করেন এবং ১১ মিনিটে ব্রাজিলের ইগর সেরোতের একটি আত্মঘাতী গোল ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায়।

যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

খেলার পরে একেভেরি বলেন, “আমরা একটি অসাধারণ কাজ করেছি, আমরা এই ম্যাচের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম। ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার সময় আমরা সবসময় উজ্জীবিত থাকি। তবে আমরা থামব না, আমাদের উন্নতির জন্য আরও কাজ করতে হবে।”

এই জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা তাদের শক্তিমত্তা আবারও প্রমাণ করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে ব্রাজিলের রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২টি শিরোপা থাকলেও এই বড় ব্যবধানে হারের ফলে তাদের হতাশ হতে হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার এই চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সেরা চারটি দল সেপ্টেম্বরে চিলিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এই প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে প্রতি গ্রুপ থেকে তিনটি করে দল ছয় দলের রাউন্ড-রবিন টুর্নামেন্টে অগ্রসর হবে। সেখান থেকে শীর্ষ চারটি দল চিলির বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে।

ব্রাজিলের এই বিশাল পরাজয় তাদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে ধরা যাচ্ছে। ব্রাজিলের কোচ দলকে পুনর্গঠন করতে এবং মনোবল ফিরিয়ে আনতে কী পরিকল্পনা নেন, তা এখন দেখার বিষয়।

অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার কোচ খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে বলেন, “এই ম্যাচে আমরা একে অপরের সঙ্গে দারুণ সমন্বয় দেখিয়েছি। আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়ের উপর বিশ্বাস ছিল।”

গ্রুপ বি-এর আরেক ম্যাচে ইকুয়েডর ২-১ গোলে বলিভিয়াকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে ইতিবাচক সূচনা করেছে। ইকুয়েডরের খেলোয়াড়রা ম্যাচে জয়ের জন্য আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং তাদের এই জয় দলকে পরবর্তী ধাপে বড় প্রেরণা দেবে।

সার্বিকভাবে, দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ ইতোমধ্যে উত্তেজনাপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচটি টুর্নামেন্টের অন্যতম আলোচিত ম্যাচ হয়ে থাকবে। ফুটবলপ্রেমীরা এখন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য। চিলির বিশ্বকাপে জায়গা পেতে দলগুলো কীভাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে, তা দেখার জন্য সবার নজর থাকবে।

ব্রাজিল: রেকর্ডধারী চ্যাম্পিয়নদের প্রত্যাশা

দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল। ১২টি শিরোপা জয়ী ব্রাজিল তাদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মাঠে নামবে। তাদের বর্তমান কোচ রামন মেনেজেস তার দলের প্রতিভার উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন।

কোচ মেনেজেস বলেন, “আমাদের এই দলটি অত্যন্ত শক্তিশালী। অনেক খেলোয়াড় ইতিমধ্যেই বিদেশি ক্লাবগুলিতে খেলছে, এবং ঘরোয়া লীগেও তারা দারুণ পারফর্ম করছে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল এখনও বিশ্বমানের প্রতিভা তৈরি করে যাচ্ছে। আমাদের কাজ হলো এই খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের গুরুত্ব বোঝানো।”

আরও পড়ুন: Chelsea vs Wolves: দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে জয়ের পথে ফিরলো চেলসি

ব্রাজিল দলে তরুণ প্রতিভার অভাব নেই। বিশেষ করে ডিফেন্ডার পেদ্রো লিমা এবং ফুল-ব্যাক জেপি শেরমন্ট ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন। পেদ্রো লিমা সম্প্রতি ইংল্যান্ডের উলভস ক্লাবে যোগ দিয়েছেন এবং এই টুর্নামেন্টে তার কাছ থেকে বড় পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ফরোয়ার্ড ডেভিড ওয়াশিংটন, যিনি ইতিমধ্যেই একটি বড় ইউরোপীয় ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তার প্রতিভা প্রমাণের জন্য এই মঞ্চ ব্যবহার করতে চান।

আরেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় ব্রেনো বিডন, যিনি করিন্থিয়ান্স ক্লাবে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন। ব্রেনো এই প্রতিযোগিতায় দলের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

আর্জেন্টিনা: ঐতিহ্য আর নতুন প্রতিভার সমন্বয়

আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ দিয়েগো প্লাসেন্টে তার দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। দলটি প্রস্তুতির সময় একটি প্রীতি ম্যাচে চিলিকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে চমৎকার ফর্ম দেখিয়েছে। ১৯৯৫, ১৯৯৭, ২০০১, ২০০৫, এবং ২০০৭ সালে শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনা এই টুর্নামেন্টে নিজেদের ছাপ ফেলতে চাইবে।

সম্প্রতি দলের সাথে যোগ দিয়েছেন ভ্যালেন্টে পিয়েরানি, যিনি এস্তুদিয়ান্তেস ডি লা প্লাটা থেকে ডাকা হয়েছেন। তিনি থিয়াগো সিলভেরোর ইনজুরির কারণে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কোচ প্লাসেন্টে বলেন, “আমাদের দলে অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে। তারা নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত।”

দলে ক্লদিও ‘ডিয়াব্লিতো’ ইচেভেরি অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। ইচেভেরি ছাড়াও রিভার প্লেটের ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়ানো এবং আগুস্তিন রুবার্তোর মতো প্রথম বিভাগে খেলা খেলোয়াড়রা দলে রয়েছেন। ভেলেজ ক্লাবের মাহের কারিজো এবং লানুসের জুলিও সোলারও দলে রয়েছেন, যিনি খুব শিগগিরই বোর্নমাউথ ক্লাবে যোগ দিতে পারেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন তোবিয়াস রামিরেজ (আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স), মিল্টন ডেলগাডো, এবং সান্তিয়াগো হিদালগো। এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা দলে নতুন শক্তি যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট: সহজ উপায়ে আয় করুন

ভবিষ্যতের তারকা তৈরি

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা রাখে। ব্রাজিলের কোচ মেনেজেস যেমন উল্লেখ করেছেন, এই খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার গর্ব অনুভব করানোই তার প্রধান লক্ষ্য। অপরদিকে, আর্জেন্টিনার কোচ প্লাসেন্টেও দলের তরুণদের দক্ষতা ও মনোবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।

আপনার প্রিয় দল কে? কমেন্টে জানিয়ে দিন!