ফুটবলে কখনো কখনো ম্যাচের ফল পূর্বানুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন ম্যাচের একদিক প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে। ম্যান সিটি বনাম ক্লাব ব্রুগার এই ম্যাচটিও ছিল এমনই এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে সিটি প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত নকআউটে পৌঁছায়।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
প্রথমার্ধে সিটির হতাশাজনক পারফরম্যান্স
ম্যাচের প্রথমার্ধে ম্যানচেস্টার সিটি ছিল একেবারে দুঃখজনকভাবে হীনমন্য। ম্যাচের শুরু থেকেই তারা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্লাব ব্রুগার ডিফেন্স সিটি দলটিকে অব্যাহতভাবে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছিল। সিটির খেলোয়াড়রা বল দখলে রাখতে পারলেও ব্রুগার খেলোয়াড়রা দ্রুত প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঘর পাওয়ার কৌশল অবলম্বন করে তাদের গতি কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা বনাম বলিভিয়া: কনমেবোল U20 চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলে জয়
ম্যাচের শুরুতে সিটির একটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। কিন্তু এর পরেও সিটি যতবার আক্রমণ করতে গিয়েছিল, প্রতিটি আক্রমণই কিছুটা অস্পষ্ট ছিল এবং ব্রুগা তা কার্যকরভাবে প্রতিহত করছিল। প্রথমার্ধে সিটির আগ্রাসী ফুটবল এবং ব্রুগার রক্ষণপালন এক দারুণ নাটকীয়তা তৈরি করেছিল। তবে, ম্যাচের ৪৫ মিনিটে ব্রুগা এক দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করে এগিয়ে যায়। রাফায়েল ওনেইদিকা তার দলের হয়ে গোলটি করেন। সিটি যে এই ম্যাচে একেবারে হেরে যাবে, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এই গোলের পর।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যান সিটির পাল্টা আক্রমণ
বিরতির পর সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা একাধিক পরিবর্তন এনে দলের খেলায় গতি আনার চেষ্টা করেন। সিটি প্রথমার্ধে একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। গার্দিওলা গুণ্ডোয়ানকে বদলে সাভিনিওকে মাঠে নামান এবং আরও একাধিক কৌশলগত পরিবর্তন আনেন।
এই পরিবর্তনগুলি কাজ করে এবং ৫৩ মিনিটে সিটি সমতায় ফেরে। মাতেও কোভাচিচ একটি চমৎকার গোল করে সিটির পক্ষে সমতা আনে। সিটির এই গোলের ফলে মাঠে একটি নতুন ধরণের উজ্জীবন তৈরি হয়। এখন সিটি জানত যে, তারা শুধু সমতায় ফিরলেই হবে না, জিততেই হবে যদি প্লে-অফে যেতে চায়। তবে, সমতা ফেরানোর পর সিটির পরবর্তী ধাক্কাটি ছিল আরেকটি আত্মঘাতী গোল।
ব্রুগার আত্মঘাতী গোল: সিটির ভাগ্যের মোড় পরিবর্তন
এরপর ম্যাচের ৬২ মিনিটে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ব্রুগা তাদের রক্ষণভাগে এক ভয়াবহ ভুল করে এবং নিজেরাই গোল করে বসে। এই আত্মঘাতী গোলটি সিটির জন্য ছিল যেন নতুন জীবন, তাদের প্লে-অফে যাওয়ার পথ একেবারে উন্মুক্ত হয়ে যায়। ব্রুগা যখন ভুল করল, তখন সিটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ একটি জয়। তবে ম্যাচ এখনও শেষ হয়নি এবং ব্রুগা প্রতিটি মুহূর্তে সিটির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে ছিল প্রস্তুত।
শেষ মুহূর্তে সিটির তৃতীয় গোল এবং নিশ্চিত জয়
সিটির আক্রমণাত্মক খেলা চলতে থাকে এবং ৭৭ মিনিটে সাভিনিও বদলি হিসেবে মাঠে নেমে একটি দুর্দান্ত গোল করে সিটির পক্ষে তৃতীয় গোল করেন। এই গোলটি আসলে ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দেয়। সিটি জানত, যে কোনো সময় ব্রুগা আবারও প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে, তাই তারা আক্রমণের মধ্যে কোনো ধরনের শিথিলতা আনতে চায়নি।
সাভিনিওর গোলটি ছিল দলের জন্য একটি বিশাল প্লাস পয়েন্ট। কারণ, যদি ওই গোলটি না হতো, তবে ম্যাচের বাকী সময়টুকু বেশ চাপের মধ্যে পার করতে হতে পারত সিটিকে। কিন্তু সিটির আক্রমণাত্মক খেলা এবং দলের শক্তিশালী মনোবল ম্যাচের শেষ মুহূর্তে জয় এনে দেয়।
প্লে-অফে সিটির পথে চ্যালেঞ্জ
যতই সিটি ম্যাচটি জিতুক, তাদের সামনে আসন্ন চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন হতে চলেছে। প্লে-অফে তারা রিয়াল মাদ্রিদ অথবা বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হতে পারে, দুটি দলই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি। তবে সিটি এই ম্যাচে যে মনোবল এবং আগ্রাসী ফুটবল দেখিয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে তারা ভয় পাচ্ছে না এবং আগামী প্লে-অফে কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত।
শেষ কথা
ম্যানচেস্টার সিটি এবং ক্লাব ব্রুগা উভয়ই তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে এই ম্যাচে। যদিও ব্রুগা ম্যাচে হারলেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক ফুটবল প্রশংসনীয় ছিল। ম্যান সিটির জন্য এই জয় ছিল জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন, আর সিটি অবিশ্বাস্যভাবে নিজেদের ভাগ্য বদলে নকআউট রাউন্ডে পৌঁছেছে। তবে, প্লে-অফে তাদের যে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটেনি। ফুটবল হলো অবিশ্বাস্য নাটক, এবং এই ম্যাচটি আবারও প্রমাণ করেছে যে কখনো কোনো দলকে কম মূল্যায়ন করা উচিত নয়।