বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অনলাইন শপিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেজিং, গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, ইত্যাদি সব কিছুই আমরা আমাদের ফোনের মাধ্যমে করি। কিন্তু এতটা ব্যবহার করার পরেও এক প্রশ্ন থেকে যায়, সেটি হলো, “ফোনের ব্রাইটনেস বা উজ্জ্বলতা কতটুকু রাখা উচিত?” এই প্রশ্নে এখনও অনেকের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে, এবং বিশেষজ্ঞরাও কখনও একমত হতে পারেননি। আসুন, আমরা জানি, সঠিক উজ্জ্বলতার মান কতটুকু হওয়া উচিত এবং আপনার চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এর ভূমিকা কী। তো চলুন জানা যাক স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস কতটুকু রাখা জরুরি ?
আরও পড়ুন: মেসেঞ্জার লাইট অ্যাপস বনাম মেসেঞ্জার: কোনটি আপনার জন্য সেরা?
স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস সেট করার মূল বিষয়
স্মার্টফোনের উজ্জ্বলতা বা ব্রাইটনেস নিয়ে সাধারণত দুটি ধারণা রয়েছে। একদল মানুষ মনে করেন, ফোনের উজ্জ্বলতা যত কম রাখা যায়, ততই ভালো, কারণ এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করেন, ফোনের উজ্জ্বলতা বেশি থাকলে তাতে ছবির এবং পাঠ্যের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের সুবিধাজনক মনে হয়।
সঠিক ব্রাইটনেস কতটুকু?
বিশেষজ্ঞরা এখনো একমত হতে পারেননি যে, কোন ব্রাইটনেস সেটিং চোখের জন্য সেরা। তবে তারা কিছু সাধারণ নির্দেশনা দিয়েছেন, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
আরও পড়ুন: VPN কি, জেনে নিন ব্যবহারের সম্পূর্ণ গাইড: সুবিধা, ঝুঁকি এবং আইনি দিক
- অন্ধকারে উজ্জ্বলতা বাড়ানো: বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, অন্ধকার বা কম আলোযুক্ত জায়গায় ফোন ব্যবহার করলে ফোনের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে রাখা উচিত। এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়বে এবং আপনি আরও সহজে স্ক্রীনটি দেখতে পারবেন। অন্ধকারে খুব কম ব্রাইটনেসে ফোন ব্যবহার করলে চোখের পেশি অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়, যা চোখে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং চোখের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- বাইরে উজ্জ্বলতা বাড়ানো: দিনের আলোতে, বিশেষ করে যখন আপনি বাইরে যান, তখন স্মার্টফোনের স্ক্রীনে প্রাকৃতিক আলোর প্রতিফলন হতে পারে। তাই বাইরে যাওয়ার সময় ফোনের উজ্জ্বলতা বাড়ানো প্রয়োজন যাতে স্ক্রীনের তথ্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
- অটো মোড ব্যবহার করা: আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে অটো ব্রাইটনেস ফিচার থাকে। এটি ফোনের উজ্জ্বলতাকে চারপাশের আলোর সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করে রাখে। যখন আপনি উজ্জ্বল পরিবেশে থাকবেন, ফোনের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেবে এবং যখন অন্ধকারে থাকবেন, তখন এটি স্বাভাবিক ব্রাইটনেসে চলে আসবে। এটি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য একটি আদর্শ ব্যবস্থা।
৫০% ব্রাইটনেস: সেরা ভারসাম্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস ৫০ শতাংশে রাখা বেশিরভাগ মানুষের জন্য সঠিক সমাধান হতে পারে। এটি এমন একটি উজ্জ্বলতা যা চোখে চাপ সৃষ্টি করে না এবং স্ক্রীনের দৃশ্যমানতা বজায় রাখে। যদিও এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত আরাম ও সুবিধার ওপর, তবে সাধারনত এই পরিমাণ উজ্জ্বলতা চোখের জন্য উপযুক্ত বলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: ৭ লক্ষণ- যা বলতে পারে আপনার স্মার্টফোন হ্যাকিং হচ্ছে কি না
ব্রাইটনেস কমাতে বা বাড়ানোর সুবিধা
যখন আপনি খুব উজ্জ্বল পরিবেশে থাকেন, যেমন বাইরে প্রচুর সূর্যালোকের মধ্যে, তখন আপনার স্ক্রীনের দৃশ্যমানতা কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে ব্রাইটনেস বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একইভাবে, যদি আপনি ঘরের ভিতরে অন্ধকারে ফোন ব্যবহার করেন, তবে ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা উচিত, কারণ অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা চোখে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা চোখের ক্লান্তি এবং শুষ্কতা তৈরি করতে পারে।
ব্রাইটনেস এবং চোখের স্বাস্থ্য
অতিরিক্ত উজ্জ্বল স্ক্রীন চোখে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। স্মার্টফোনের স্ক্রীন থেকে আসা নীল আলো (blue light) চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এটি নিদ্রাহীনতা, চোখে জ্বালা-পোড়া, এবং দীর্ঘদিনের ব্যবহারের পর চোখের শুষ্কতা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে, নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক উজ্জ্বলতায় ফোন ব্যবহার করলে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ফোন ব্যবহারের সময় স্ক্রীনে অতিরিক্ত নীল আলো প্রতিরোধের জন্য ব্লু-লাইট ফিল্টারিং মোডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চোখের জন্য আরও সহায়ক।
আরও পড়ুন: সেটিংসে ছোট্ট পরিবর্তন করলে, পাসওয়ার্ড জানতে পারবে না হ্যাকার
স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস এবং মুড সেটিংস
অনেক স্মার্টফোনে এখন ফিচার রয়েছে, যা আপনার অভ্যস্ত সময়ের জন্য নিজে থেকেই ব্রাইটনেস সেট করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ফোন রাতের সময় ব্রাইটনেস কমিয়ে দেয় এবং দিনের বেলায় উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। এই ধরনের সেটিংস ব্যবহার করলে আপনি আপনার চোখের ওপর চাপ কমাতে পারবেন এবং ফোন ব্যবহারের সময় আরাম পাবেন।
সঠিক ব্রাইটনেস পরিমাপের কিছু টিপস
- অটো ব্রাইটনেস চালু রাখুন: এটি খুবই উপকারী হতে পারে, কারণ এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পরিবেশের আলো অনুযায়ী ব্রাইটনেস সামঞ্জস্য করে।
- ব্রাইটনেস কমাতে দিনে এবং বাড়াতে রাতে: দিনে আলোতে ব্রাইটনেস বাড়ানো উচিত এবং রাতে কমানো উচিত।
- মাথার বা চোখের উচ্চতা ঠিক রাখুন: ফোনের স্ক্রীনকে চোখের সমান্তরালে রাখুন যাতে চোখে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
- অনেক সময় স্ক্রীন থেকে দূরে থাকুন: স্ক্রীনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার বদলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
উপসংহার
স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস কতটুকু রাখা জরুরি তা সেট করা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়, যা মূলত আপনার আরাম ও চারপাশের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। তবে, সঠিক ব্রাইটনেস ব্যবহারে চোখের চাপ কমানো সম্ভব এবং চোখের স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী। আপনি যদি ফোন ব্যবহারের সময় আপনার ব্রাইটনেস ৫০% এর কাছাকাছি রাখেন এবং অটো মোড ব্যবহার করেন, তবে আপনার চোখের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে। একইসাথে, অতিরিক্ত উজ্জ্বল স্ক্রীনের ফলে চোখের ক্লান্তি এবং শুষ্কতা থেকে দূরে থাকবেন।
2 thoughts on “স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস কতটুকু রাখা জরুরি? ৯৯% মানুষ জানেন না”