মানুষ কীভাবে ‘গাধা’ হয়? জেনে নিন লক্ষণগুলো

গাধা প্রকৃতিগতভাবে বেশ পরিশ্রমী একটি প্রাণি। নীরবে ভার বয়ে যাওয়া প্রাণি হিসেবেই এটি পরিচিত বেশি। ঐতিহাসিকভাবে মানুষ গাধাকে এই পরিচয়েই ক্রমে পরিচিত করে তুলেছে। তবে এই বঙ্গে গাধা বলতে শুধু চারপেয়ে প্রাণিকেই বোঝায় না। এখানে প্রচুর দু’পেয়ে মানুষও একই নামে পরিচিতি পায়!




সাধারণত যেসব মানুষকে অন্যরা গাধা বলে ডাকে, সেসব মানুষকে কিছু নির্দিষ্ট কারণেই এমন উপাধি দেওয়া হয়। যেমন, গাধা বলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোধবুদ্ধিহীন বা নির্বোধ ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়। আবার একেবারেই কান্ডজ্ঞান না থাকা ব্যক্তিকেও গাধা বলে ডাকে অনেকে। সেদিক থেকে বলতে গেলে, এ দেশের যেসব মানুষকে গাধা বলা হয়, তাদের চরিত্র গাধার পুরোপুরি বিপরীত! কারণ প্রাণিকূলের হিসাবে এটি নাকি পরিশ্রমী ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন। অথচ এ দেশের মানুষেরা গাধা বলে স্বগোত্রীয় যাদের অভিহিত করে থাকে, তার পেছনে কারণ থাকে উল্টোটা।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আরও পড়ুন : কম বয়সী পুরুষদের প্রতি কেন নারীদের বেশী আকর্ষণ

প্রাণি হিসেবে গাধাদের নিয়ে দিবসও চালু করেছে মনুষ্য প্রজাতি। প্রতি বছরের ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব গাধা দিবস। ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে এই দিবস। বুঝুন তবে, গাধাকে কতটা ভালোবাসে মানুষ!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দেখতে পাওয়া যায় এই প্রাণী। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের একটি গবেষণাতে জানানো হয়েছে যে, বিশ্বে চার কোটি ৫৮ লাখ গাধা রয়েছে। তবে প্রাণীটির বিচরণ সবচেয়ে বেশি আফ্রিকা মহাদেশে। ২০২২ সালের গ্লোবাল ডাঙ্কি পপুলেশন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গাধা রয়েছে ইথিওপিয়াতে। এরপর সবচেয়ে বেশি গাধা আছে সুদান ও শাদে। যদিও আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতায় যে কোনো রসিক মানুষের মনে এ নিয়ে অবিশ্বাস দানা বাঁধতেই পারে! গাধার পরিমাণে আমরাই বা কম কীসে বলুন?

সে যাক গে। আসুন, আজকে বঙ্গদেশের মানুষরূপী গাধাদের চিনে নেওয়া যাক। অর্থাৎ, বোধবুদ্ধিহীন বা নির্বোধ বা কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষ কীভাবে চিনবেন? এমন মানুষ আমাদের আশেপাশেই ঢের থাকে। আপনি হয়তো মনে মনে ওদের ‘গাধা’ বলেই ডাকেন।

আরও পড়ুন : প্রেম হারোনার কষ্ট কি উপকারিও হতে পারে ?

তবে এ ধরনের ‘বাংলার গাধা’ চিনে নেওয়ার কিছু লক্ষণও আছে। কেবল চিনে নেওয়ার অপেক্ষা। এবার তা নিয়েই বরং একটু খোঁজখবর নেওয়া যাক।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে অর্থনীতির ইতিহাস পড়াতেন কার্লো এম. সিপোল্লা। ২০০০ সালে ৭৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান। এই অধ্যাপক একটি বই লিখেছিলেন। বইটির নাম, ‘দ্য বেসিক ল’স অব হিউম্যান স্টুপিডিটি’। ১৯৭৬ সালে ইতালিতে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে এই বই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছিল বইটি। এতে নির্বোধ বা বোধবুদ্ধিহীন প্রকারের মানুষের বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছিলেন সিপোল্লা। তাঁর মতে, সমাজের একটি নির্দিষ্ট স্তরেই যে বাংলায় প্রচলিত গাধাপ্রকৃতির মানুষ কেবল থাকে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বরং সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যেই ‘গাধা’ বিদ্যমান। ব্যবসা বা অফিসের বড় কর্তাদের মধ্যে যেমন থাকে, তেমনি একেবারে সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও থাকে। থাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত গবেষক বা স্কুল–কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও। অর্থাৎ, সমাজের সকল স্তর ও পেশার মানুষের মধ্যেই ‘গাধা’ বিরাজমান! কোনোটাকেই ছাড় দেওয়ার উপায় আসলে নেই।

আরও পড়ুন : বেশি হাসা, দ্রুত কথা বলা, অল্পতেই রেগে আগুন- এমন সব আচরণের কী মানে?

এসব মানুষকে চিনে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণের কথাও বলেছেন কার্লো এম. সিপোল্লা। তাঁর মতে, এমন মানুষদের তুলনামূলক বুদ্ধিমান মানুষেরা ‘নির্বোধ’ ভেবে সাধারণত হেলা করেন। আর এতেই সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হয়। কারণ মনুষ্যপ্রজাতির মধ্যকার এই ‘গাধা’গণ সমাজের সবচাইতে ভয়ংকর ব্যক্তিত্ব। এসব মানুষ যেমন নিজের ক্ষতি করে, তেমনি বুদ্ধিমান মানুষেরও ক্ষতি করে অবলীলায়। কারণ এগুলো বোঝার মতো বোধবুদ্ধিই যে তাদের থাকে না! ফলে নিজের নাক কেটে হলেও তারা পরের যাত্রাভঙ্গে পিছপা হয় না। সিপোল্লার মতে, নির্বোধ মানুষের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যই হলো এই সকলের ক্ষতি করার সক্ষমতা। সুতরাং, এমন মানুষ আশেপাশে পেলে সতর্ক থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

2 thoughts on “মানুষ কীভাবে ‘গাধা’ হয়? জেনে নিন লক্ষণগুলো”

Leave a Comment