Sevilla vs Barcelona: লা লিগার চলতি মৌসুমে সেভিলা ও বার্সেলোনা দুইটি বড় দল হিসেবে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করে চলেছে। তবে গত রবিবার সেভিলার রামন সানচেজ-পিজুয়ানে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল এক উত্তেজনাপূর্ণ সন্ধ্যা, যেখানে বার্সেলোনা সেভিলাকে ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে।
এই জয়টি কাতালান ক্লাবটিকে শিরোপার লড়াইয়ে ফের শক্তিশালীভাবে প্রতিস্থাপন করেছে। এদিন বার্সেলোনা ছিল প্রতিপক্ষের তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক এবং প্রতিভাবান, এবং তাদের চমৎকার পারফরম্যান্স সেভিলাকে কোন সুযোগই দেয়নি।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ম্যাচের শুরুতেই বার্সেলোনার দাপট: লেওয়ানডস্কি গোলের সূচনা করেন
ম্যাচের শুরু থেকেই বার্সেলোনা আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। মাত্র সাত মিনিট পরই লেওয়ানডস্কি বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোলটি করেন। এই গোলটি আসলে একটি সুন্দর দলের প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ছিল।
সেন্টারব্যাক ইনি্গো মার্টিনেজের একটি হেডার থেকে লেওয়ানডস্কি সঠিকভাবে পা বাড়িয়ে গোলটি করেন। তাঁর দারুণ ভলি শট সেভিলার গোলরক্ষক বোণোকে পরাস্ত করে বার্সেলোনা এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
এটি ছিল বার্সেলোনার এক ক্ষিপ্র শুরু, এবং তারা খেলার নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় রাখতে চেয়েছিল। তবে সেভিলা তাদের মাথা উঁচু করে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্রুত সমতাসাধন করে। মাত্র তিন মিনিট পর সেভিলা আক্রমণ করে এবং দ্রুত একটি গোল করে।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কেন? অনেকেরই জানা নেই
সাভিলার মিডফিল্ডার সাউল নিগুয়েজ একটি দুর্দান্ত কনট্রাগোল্পের মাধ্যমে রুবেন ভারগাসকে বল দেন, যিনি নির্ভুলভাবে গোল করেন এবং স্কোর ১-১ করে দেন।


ফার্মিন লোপেজের অবদান: দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্তনের পর গোল
প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুই দলই সমানে সমান ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে শুরু করে। কোচ জাভি হার্নান্দেজের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ফার্মিন লোপেজকে মাঠে নামানো। পরিবর্তনটির পর ফার্মিন প্রথম বল নিয়ে মাঠে নামতেই গোল করে ফেলেন। মাত্র ৪৬ মিনিটে পেদ্রির একটি সেন্টার থেকে দুর্দান্ত এক হেডারে তিনি গোল করেন এবং বার্সেলোনা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এই গোলটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল, কারণ ফার্মিনের প্রথম বল স্পর্শে সেভিলার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে এবং ম্যাচের সঠিক গতি নির্ধারণ করে।
এটি ছিল বার্সেলোনার দৃঢ় মনোবলের পরিচায়ক। ফার্মিনের গোল সেভিলাকে একেবারে স্তব্ধ করে দেয় এবং সেভিলার প্রতিরক্ষা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। বার্সেলোনার পেশাদারিত্ব এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল থেকে সেভিলা কিছুই করতে পারছিল না।
রাফিনহার গোল: সেভিলাকে আরও চাপে ফেলে দেওয়া
ফার্মিনের গোলের মাত্র ৯ মিনিট পর বার্সেলোনা তাদের আধিপত্য আরও একবার প্রতিষ্ঠিত করে। ৫৫ মিনিটে রাফিনহা একটি দারুণ শট নিয়ে গোল করেন। রাফিনহার এটি ছিল এমন একটি গোল যা সেভিলার গোলরক্ষক বোণোর হাতে থাকা সম্ভব ছিল না।
ডান পায়ের শটটি সরাসরি সেভিলার গোলপোস্টের এক কোনায় গিয়ে ঢোকে, এবং বার্সেলোনার সুবিধা আরও বাড়িয়ে দেয়। ৩-১-এ এগিয়ে গিয়ে বার্সেলোনা সেভিলার জন্য আর কোন সুযোগই না রেখে দেয়।
আরও পড়ুন: এক্স মানে কি গুগল? না জানলে জেনে নিন এর বিভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার
রাফিনহার গোলটি ছিল দলের একাধিপত্যের ইঙ্গিত। বার্সেলোনার আক্রমণাত্মক খেলা সেভিলার প্রতিরক্ষা ভেঙে ফেলেছিল এবং সে দিক থেকে তারা যে খেলাটির নিয়ন্ত্রণে ছিল তা স্পষ্ট ছিল। সেভিলা অবশ্য চেষ্টা করেছিল কিছু পাল্টানো, তবে বার্সেলোনা খুব দ্রুত তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়।
এরিক গার্সিয়ার গোল: বার্সেলোনার চার গোলের জয়
ম্যাচের শেষ দিকে সেভিলার প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়তেই বার্সেলোনা চূড়ান্ত আক্রমণ চালায় এবং ৮৯ মিনিটে আরও একটি গোল পায়। এই গোলটি আসে এরিক গার্সিয়ার মাথা থেকে, যিনি রাফিনহার একটি নিখুঁত ক্রস থেকে এক দুর্দান্ত হেডারে সেভিলার গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। এই গোলের মাধ্যমে বার্সেলোনা ৪-১ ব্যবধানে সেভিলাকে পরাজিত করে এবং জয়ের পরিণতি নিশ্চিত করে।
যদিও ম্যাচের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তবে শেষ সময়ে একটি বিতর্কিত মুহূর্ত ঘটে। ফার্মিন লোপেজ একটি শক্তিশালী ট্যাকল করেন ডিজিব্রিল সোয়ের উপর, যার জন্য রেফারি ভিএআর রিভিউ করে তাকে লাল কার্ড দেখান। এটি বার্সেলোনার জন্য একটি নেতিবাচক দিক হলেও, দলের জয় এর উপর overshadow হয়ে যায় এবং ১০ জনের দলে থাকা সত্ত্বেও তারা ম্যাচটি সহজেই জিতে নেয়।


Sevilla vs Barcelona: লা লিগায় শিরোপা লড়াইয়ের উত্তেজনা
এই ম্যাচে বার্সেলোনার ৪-১ গোলের জয় তাদের লা লিগার শিরোপার লড়াইয়ে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা এখন শীর্ষস্থানীয় দলের সঙ্গে একই পয়েন্টে রয়েছে এবং প্রতিপক্ষদের জন্য সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে।
শিরোপার লড়াই এখন আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ বার্সেলোনা যেমন তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি সেভিলার বিপক্ষে এই বড় জয়ের ফলে তাদের আত্মবিশ্বাসও আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর অনুরোধে কুমির হলেও আর মানুষ হতে পারেননি নদের চাঁদ
অন্যদিকে, সেভিলা এই পরাজয়ের পর বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। যদিও তাদের পারফরম্যান্স কিছু ভালো মুহূর্ত দেখিয়েছে, কিন্তু বার্সেলোনার বিপক্ষে তারা আত্মবিশ্বাসের অভাব ও কৌশলের অভাবে হেরে গেছে। এই পরাজয় তাদের লক্ষ্য অর্জনে বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে স্থান পাওয়ার জন্য তাদের সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
শেষ কথা: বার্সেলোনার শক্তি এবং সেভিলার চ্যালেঞ্জ
সেভিলা বনাম বার্সেলোনা ম্যাচটি লা লিগায় শিরোপার লড়াইয়ের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বার্সেলোনা যদি এইভাবে খেলে, তবে তারা শিরোপা জয়ের জন্য অন্যতম বড় দাবিদার হতে চলেছে। তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং প্রতিপক্ষকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করার সক্ষমতা অনেক কিছু বলে দেয়। সেভিলা অবশ্য একটি শক্তিশালী দল, কিন্তু তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তারা অবশ্যই এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে নিজেদের সেরা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে।
এছাড়া, লা লিগার চলতি মৌসুমে যেকোনো সময় শিরোপা লড়াই আরও তীব্র হতে পারে, তবে বার্সেলোনা তাদের গোলের উৎস এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।