বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন এক অধ্যায় যেন শুরু হতে যাচ্ছে! দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশে ফিরলেন ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেডের তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।
যখন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখলেন, তখনই বোঝা গেল, তাকে ঘিরে দেশের মানুষের ভালোবাসা কতটা বিশাল! হাজারো মানুষের ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে গেলেন এই তরুণ ফুটবলার।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বিমানবন্দরে হামজাকে এক নজর দেখতে উপচে পড়া ভিড়
সকাল থেকেই বিমানবন্দরের সামনে ছিল উত্তেজনার এক আলাদা আমেজ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমর্থকেরা ছুটে এসেছিলেন শুধুমাত্র তাদের প্রিয় তারকাকে এক নজর দেখতে। মোবাইল হাতে ইউটিউবার, গণমাধ্যম কর্মী, ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিনিধি—সবাই অপেক্ষায় ছিলেন তার প্রথম প্রতিক্রিয়ার জন্য।
যখন তিনি বেরিয়ে আসলেন, পুরো বিমানবন্দর এলাকা ‘হামজা! হামজা!’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল। শত শত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, মানুষের ভিড়, চারপাশের উন্মাদনা—সবকিছু যেন ফুটবল তারকাকে ঘিরে এক অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি করল।
আরো পড়ুন: যেভাবে বই পড়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন
আরও পড়ুন
হঠাৎ করেই তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বললেন—
“ইনশা আল্লাহ, আমরা উইন খরমু।”
মাত্র কয়েক শব্দেই যেন লাখো মানুষের হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠল। এই বিশ্বাস, এই আত্মবিশ্বাস, আর এই দেশপ্রেমের অনুভূতিতেই তো সবাই তার দিকে ছুটে এসেছে!


হামজার প্রতিক্রিয়া: ‘আমি রোমাঞ্চিত’
গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে হাসিমুখেই বললেন, “অ্যামাজিং, অ্যামাজিং! অনেক দিন পর ফিরলাম। আমি রোমাঞ্চিত।”
তার কণ্ঠে ছিল গর্ব, ছিল ভালোবাসা।
এদিকে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন না করলেও, গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় জমিয়েছিলেন। প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করার জন্য সবার মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা চলছিল।
নিজ গ্রামে উষ্ণ অভ্যর্থনায় অভিভূত হামজা
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই সোজা নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের পথে রওনা দেন হামজা।
সেখানে পৌঁছানোর আগেই পুরো গ্রাম যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। রাস্তায় রাস্তায় সাজানো হয়েছিল ব্যানার, ফেস্টুন আর পতাকা দিয়ে।
স্নানঘাট বাজারে পৌঁছানোর পরই শুরু হয় এক বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। হাজার হাজার মানুষ তাকে বরণ করে নিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
যখন তিনি বাড়ির দরজায় পা রাখলেন, তখন তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাসের সীমা ছিল না।
সংবর্ধনায় হামজার বক্তব্য: ‘আমার খুব ভালো লাগছে!’
বিকেলে সংবর্ধনা মঞ্চে উঠে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বললেন—
“আমার খুব ভালো লাগছে, আপনারা যে আইছেন আমারে দেখার লাগি।”
এরপর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কয়েকবার বললেন—
“বাংলাদেশ জিন্দাবাদ! বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!”
শুধু গ্রামের মানুষ নয়, আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ ছুটে এসেছিলেন। কেবল এক ঝলক দেখার জন্য!
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়
তরুণ ফুটবলারদের জন্য অনুপ্রেরণা
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কয়েকজন ফুটবলার বললেন—
“আমরা তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একদিন দেশের হয়ে খেলতে চাই। আশা করি, হামজা চৌধুরী আমাদের দেশের গর্ব হয়ে উঠবেন।”
এদিকে হবিগঞ্জ জেলা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বললেন—
“হামজা শুধু আমাদের জেলার নয়, আমাদের দেশের গর্ব। আমরা চাই, তার হাত ধরে দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক।”


হামজার স্বপ্ন: ‘আমরা জিতবো, এগিয়ে যাবো’
আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হবে তার।
এই ম্যাচ নিয়ে তার মন্তব্য ছিল বেশ স্পষ্ট—
“আমার বড় স্বপ্ন আছে। কোচ হাভিয়েরের সঙ্গে কাজ করব। ইনশা আল্লাহ, আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতে পারমু।”
এই আত্মবিশ্বাসই বলে দেয়, বাংলাদেশ ফুটবল নতুন এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি
হামজার আগমনে পুরো এলাকাজুড়ে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও প্রস্তুত ছিল, যেন বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।
কিন্তু ভালোবাসা আর আবেগের এই উচ্ছ্বাসের সামনে কি আর কড়া নিরাপত্তা বাধা হতে পারে? মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে, ভালোবাসার টানে!
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
শেষ কথা: হামজা ফিরেছেন, এখন অপেক্ষা তার মাঠের পারফরম্যান্সের!
হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশে ফেরা শুধু একটি ব্যক্তিগত সফর নয়। এটি দেশের ফুটবলে নতুন এক আশার আলো।
তার অভিষেক ম্যাচে কি বাংলাদেশ জয় পাবে? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—হামজার হাত ধরে বাংলাদেশের ফুটবল এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে!
সবাই এখন একটাই স্বপ্ন দেখছে—“ইনশা আল্লাহ, আমরা উইন খরমু!”